মঙ্গলবার, ০৩ Jun ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলাধীন কাশিমপুরে অবস্থিত বিএডিসি বীজ উৎপাদন খামারের কামরুল হাসান (উপ-পরিচালক) ও আনোয়ার হোসেন (সহকারী উপ-পরিচালক) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ না করিয়েই হাজিরা খাতায় নিয়মতি স্বাক্ষর নেওয়া, পুরাতন শ্রমিকদের কাজে না নেওয়া, শ্রমিকের বোনাস প্রদান না করা, অনিয়মিত শ্রমিকদের হাজিরা খাতায় নিয়মিত দেখিয়ে তাদের বেতনের অর্থ আত্মসাৎ করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, খলিলুর রহমান উক্ত খামারের একজন শ্রমিক। উচ্চ আদালতে মামলার আদেশ অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে তিনি এবং খামারের শ্রমিকগণ ঈদের বোনাস পেয়ে আসেছেন। কিন্তু চলতি বছর তিনিসহ ২৪ জন শ্রমিককে বোনাস দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। কারণ হিসেবে উপ-পরিচালক বছরে কমপক্ষে ২৪০ দিন কাজ করার শর্তের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রেক্ষিতেই গত ২০ মার্চ ‘২৫ তারিখে খলিলুর রহমান কাশিমপুর বীজ উৎপাদন খামার, মুক্তাগাছার উপ-পরিচালক কামরুল হাসান বরাবর তথ্য প্রাপ্তির নির্ধারিত আবেদন ফরমের মাধ্যমে ‘কমপক্ষে ২৪০ দিন কাজ না করলে ১ জন শ্রমিক ঈদুল ফিতরের বোনাস পাবে না কেন? এ বিষয়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন আছে কি? থাকলে তার প্রতিলিপি দেখতে চাই। একইসাথে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের বোনাস প্রাপ্ত উক্ত খামারের শ্রমিকদের সংখ্যা ও তালিকার প্রতিলিপি দেখতে চাই।’ এই তথ্যগুলো চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদন করার পরও তথ্য সরবরাহ না করেই তথ্য প্রাপ্তির ফরমে তথ্য বুঝে পেলাম মর্মে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এমনকি তথ্য চেয়ে আবেদনকারীকে তিনি জানিয়েছেন, সরকারী এ প্রজ্ঞাপন জনসম্মুখে প্রকাশের কোনো সুযোগ নাই। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কেননা তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী স্বপ্রণোদিতভাবে জনসম্মুখে তথ্য প্রকাশ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে লুকোচুরি করছেন। এছাড়া তার অফিস সংক্রান্ত নানা তথ্য সম্বলিত তথ্যবোর্ড উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শন করা নেই। প্রতিটি সরকারী অফিসের তথ্যাদি ওয়েব পোর্টালে হালনাগাদ ও নিশ্চিত করার বিধান থাকলেও উক্ত বিএডিসির নামে কোনো ওয়েব পোর্টাল পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, শ্রমিকেদর মধ্যে ২৭ জনকে বোনাস দেওয়া হয়েছে। যদিও মোট ৫১ জন শ্রমিক উক্ত খামারে কাজ করেন।
উক্ত কর্মকর্তা নিয়মিত ভিত্তিতে মোট ১২০ জনের বেতন সরকারী কোষাগার থেকে নিয়ে থাকেন বলে আব্দুল গফুর নামের একজন শ্রমিক জানান। তিনি আরও জানান, উক্ত খামারে বাস্তবে ১ জন নারী শ্রমিক না থাকলেও ১০ বা তার অধিক নারী শ্রমিকের নামে বেতন সংগ্রহ করেন। এছাড়া ১৪ জন ব্যাতিত অন্যান্য শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫-১২ দিন কাজ করালেও হাজিরা খাতায় ৩০ দিনের স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন খামারের উপ-পরিচালক। এই কৌশলে তিনি প্রতি শ্রমিকের নামে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করছেন।
বিগত ঈদুল ফিতরের বোনাস দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপ-পরিচালকের আদেশে আব্দুল গফুর নামের শ্রমিককে মারধর করা হয়। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করলে উপ-পরিচালক তার সহযোগী ২৭ জন শ্রমিক যাদের বোনাস দেওয়া হয়েছে তাদের সহযোগিতায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে সমাধান করেন। পরবর্তীতে আব্দুল জব্বার নামের একজন শ্রমিক দুদককে অবহিত করলে তার নিকট থেকেও একই কৌশলে জোর করে স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। উক্ত ২ জনকে খামারে আর কাজের জন্য ডাকা হচ্ছে না।
শ্রমিকদের তথ্য অনুযায়ী, তার দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ্যে আসায় নিজেকে নিরাপদ রাখতে ইতোমধ্যে বদলির জন্য আবেদন করেছেন। খামারের শ্রমিকগণ তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পেলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে বিএডিসি বীজ উৎপাদন খামার, মুক্তাগাছার উপ-পরিচালক কামরুল হাসান সকল অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করে। তিনি বলেন একজন শ্রমিক শুধুমাত্র বছরে ২৪০ দিনের হাজিরা হলেই কেবল মাত্র বোনাস পাবেন।কিন্তু এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন দেখাতে ব্যর্থ হন। আবার প্রত্যেক শ্রমিকের সোনালী ব্যাংক মুক্তাগাছা ও কালিবাড়ী শাখায় একটি করে দুই একাউন্ট আছে বলে স্বীকার করলেও গত এপ্রিল/২৫ এর বেতন শীট দেখতে চাইলে গোপনীয়তার অজুহাতে তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।l